মেনু নির্বাচন করুন
Text size A A A
Color C C C C
সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আমাদের সম্পর্কে

ওয়াকফ্  এস্টেট পরিচিত :

সিলেট শহরের শেখঘাটস্থ ‘‘এহিয়া ভিলা’’ নিবাসী সিলেট অঞ্চলের স্বনামধন্য জমিদার খান বাহাদুর  আবু নছর মোহাম্মদ এহিয়া ওরফে (জিতু মিয়া) সাহেব তাঁর সমুদয় সম্পত্তি তদানিন্তন আসাম সরকারকে ট্রাস্টি নিয়োগ করে ১৯২২ খ্রিঃ ১৬ই ফেব্রুয়ারী ওয়াক্ফ করেন। উক্ত ওয়াকফ্ খান বাহাদুর এহিয়া ওয়াক্ফ এস্টেট সিলেট নামে পরিচিত। এ ওয়াকফ এস্টেটটি,ওয়াকফ্ প্রশাসক বাংলাদেশের তালিকাভূক্ত, যার নিবন্ধন ইসি নং -১৩০৭১।

এস্টেটের ওয়াকিফ (প্রতিষ্ঠাতা) পরিচিতি :

খান বাহাদুর আবু নছর মোহাম্মদ এহিয়া ওরফে জিতু মিয়া ১৮৪৮ সালে সিলেটের শেখঘাটস্থ এক সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতা মাওলানা আব্দুল কাদির ও চাচা মাওলানা আব্দুর রহমান দু জন বিখ্যাত জমিদার এবং নামকরা আলেম ছিলেন। জিতু মিয়া প্রথম জীবনে সাব রেজিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও কিছু দিন পর তিনি এ চাকুরী ছেড়ে দেন। ১৮৯৭ থেকে ১৯০৩খ্রিঃ সাল পর্যন্ত তিনি সিলেট পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। জিতু মিয়া অনারারী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তৎকালীন বৃটিশ সরকার জমিদারি সুষ্ঠভাবে পরিচালনা ও সমাজ সেবায় অবদান রাখার জন্য তাঁকে ‘‘খান বাহাদুর’’ উপাধি প্রদান করে। পরবর্তীতে বৃটিশ সরকার তাঁকে ‘‘কয়ছরে হিন্দ’’ উপাধিতেও ভূষিত করে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, তৎকালীন ভারতবর্ষে মাত্র কয়েক জন ব্যক্তিবর্গকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়েছিল। খান বাহাদুর আবু নছর মোহাম্মদ এহিয়া আরবী ও ফারসী ভাষায় পারাদর্শী ছিলেন।

খান বাহাদুর আবু নছর মোহাম্মদ এহিয়া তাঁর প্রথম ওয়াকফ্ ডিডে ছেলে মেয়ে,ভাই, ভাতিজা ও নাতির  নাম উল্লেখ করে ডিড করেছিলেন কিন্তু তৎকালীন বৃর্টিশ সরকার অর্থাৎ আসামের গভর্ণর এস্টেটের ট্রাষ্টি হতে রাজি হননি, কারন হিসাবে বলা হয় মুসলিম আইনে উত্তারাধিকারী থাকলে সরকার ট্রাস্টি হবে না। তাই পরিবর্তীকালে ওয়াকিফ তাঁর ওয়াকফ্ ডিডে তাঁর কোন ছেলে,মেয়ে,ভাই, ভাতিজা ও নাতি-নাতনী নেই উল্লেখ করে সরকারকে ট্রাষ্টি নিয়োগ করে রেজিষ্টারী করেন এবং সকল স্বজনকে তাঁর উপর নির্ভরশীল হিসাবে উল্লেখ করে ওয়াকফ্ ডিড করেন। তবে ছেলে, মেয়ে, ভাতিজা,ও নাতি-নাতনীকে তৎসময়ের পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনুসারে মাসিক ভাতা প্রদানের জন্য ডিডে নির্দেশ দিয়ে যান। যাহা বংশানুক্রমে বর্তমানে চালু আছে। ওয়াকিফের মূল উদ্দেশ্য ছিলো তাঁর সম্পত্তি যাতে নষ্ট না হয় এবং সম্পত্তির আয় হতে ধর্মীয়,সামাজিক ও শিক্ষার ক্ষেত্রে যাহাতে জনসাধারণ উপকৃত হয়।

ওয়াকিফের বসতবাড়ি এহিয়া ভিলায় উপমহাদেশের খ্যাতনামা নেতৃবৃন্দের মধ্যে মহাত্না গান্ধী,ঢাকার নবাব স্যার সলিম উল্লাহ, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি জনাব ফখরুদ্দীন আলী আহমেদ, আসামের সাবেক গভর্ণর স্যার সাদ উল্লাহ, ভারতের সাবেক আইসিএস খান বাহাদুর গজনফর আলী, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন, মজলুম জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, রাজনীতিবিদ ফরিদ পুরের লাল মিয়া, মোহন মিয়া, উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দীন মৌলানা হোসাইন আহমদ মাদানী,মৌলানা সহুল আহমেদ উছমানী, ফরায়েজী আন্দোলনের প্রবাদ পুরুষ হাজী শরিয়ত উল্লাহর উত্তরসূরী পীর বাদশা মিয়া  ও পীর মুসলেহ উদ্দিন, দুদু মিয়া, ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম,এ,জি ওসমানী সহ উপমহাদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তাঁর বাড়িতে এসেছেন ও সভা সম্মেলন করেছেন এবং আতিথিয়েতা গ্রহণ করেছেন।

তৎকালীন সময়ে অতিথি আপ্যায়নে জিতু মিয়ার বাড়ীর একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল। তাঁর বাড়িতে ১২২টি চুলায় রান্না-বান্না হতো। প্রতিদিন জরুরী প্রয়োজনে গ্রাম থেকে আগত শতশত লোক জিতু মিয়ার বাড়িতে আতিথিয়েতা গ্রহন করতেন। তিনি সর্বপ্রথম গাড়ী ব্যবহার করেন। তাঁর ব্রাহাম গাড়ী ছিল তকমাআটা। সিলেট অঞ্চলকে চেনার  বৈশিষ্ট্য হিসাবে একটি প্রবাদ এখনও প্রচলিত আছে। প্রবাদটি হলো :

‘‘চাঁদনী ঘাটের সিঁড়ি, আলী আমজাদের ঘড়ি

বঙ্ক বাবুর দাঁড়ি-আর জিতু মিয়ার বাড়ী ’’

খান বাহাদুর ওয়াকফ্ এস্টেট সৃষ্টির পর আজ অবদি কোন অভাবগ্রস্থ লোক সাহায্যের জন্য কেবি এহিয়া ওয়াক্ফ এস্টেটে হাত পাতলে, তাকে খালি হাতে কখনো ফিরানো হয়নি। ধর্মীয়, সামাজিকতা ও শিক্ষাক্ষেত্রে অসাধারণ ভূমিকা পালন করা সিলেটের সর্বজন পরিচিত এ দানবীর ও জনহিতৈষী ব্যক্তি ১৯৫২ সালের ২৪ জুলাই এক বর্ষণমুখর দিনে এই নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে চিরবিদায় নেন। খান বাহাদুর আবু নছর মোহাম্মাদ এহিয়া ওরফে জিতু মিয়া বহু পূর্বে পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিলেও তার সৃষ্ট ওয়াক্ফ এস্টেট এখনও সামাজের উন্নয়ন, অগ্রগতি এবং কল্যাণকর কাজে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে প্রতিনিয়ত।

খান বাহাদুর আবু নছর মোহাম্মদ এহিয়া ওরফে জিতু মিয়া ধর্মীয়,সামাজিক ও শিক্ষার ক্ষেত্রে যাহাতে জনসাধারণ উপকৃত হয়।ওয়াকিফের মূল উদ্দেশ্য ছিলো তাঁর সম্পত্তি যাতে নষ্ট না হয় এবং সম্পত্তির আয় হতে ধর্মীয়,সামাজিক ও শিক্ষার ক্ষেত্রে যাহাতে জনসাধারণ উপকৃত হয়।